যশোর প্রতিনিধি: যশোরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে চলছে টোল আদায়ের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি। গত বছর এ সংক্রান্ত একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে সড়ক পথে ব্যারিকেড দিয়ে টোল আদায় বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা কোনো কাজে আসেনি। হাইকোর্টের এ আদেশ যাদের পালন করার কথা, যশোরে তারাই সড়কে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
দক্ষিণবঙ্গের এক শীর্ষ পরিবহন ব্যবসায়ীর দাবি, শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ প্রতি মাসে সড়ক থেকে কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে থাকে। তিনি এ বিষয়ে সুরাহা চেয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
যশোর শহরের বিভিন্ন স্পটে চাঁদা দিতে হচ্ছে চালকদের। যশোর সদরের মুড়লি, পুলের হাট, খয়েরতলা, নিউ মার্কেট, ঝুমঝুমপুর, রাজারহাট, চাঁচড়া চেকপোস্ট, ধলগা রাস্তা মোড়, পালবাড়ি, বড় বাজার, খাজুরা বাস স্ট্যান্ড, হাইকোর্ট মোড়, যশোর-বেনাপোল সড়ক, যশোর-মাগুরা সড়কে বিভিন্ন সংগঠন, ইজিবাইক মালিক সমিতির পাশাপাশি পুলিশ সরাসরি চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। ট্রাক, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, টেম্পু, আলমসাধু থেকে প্রতিদিন ও মাসিক হারে চাঁদা তোলা হয় বলে জানিয়েছেন এসব গাড়ির চালক ও মালিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাড়িচালক ও মালিকরা জানান, প্রতিদিন একজন চালক ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করলে কমপক্ষে ৩০০ টাকা রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়।
তারা জানান, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে ২০ থেকে ৫০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হলেও পুলিশকে একটু বেশি না দিলে হয় না। তারা এখন আর ২০-৫০ টাকা হাতে নিতে চান না। পুলিশকে ৫০ থেকে ১০০ টাকার নিচে দিতে গেলে গাড়ি আটকে মামলা দিয়ে দেয়।
ঝিকরগাছা থানাধীন নাভারন হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। হাইওয়েতে চলাচলকারী নসিমন, করিমন, টেম্পু, আলমসাধু, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে দিনরাত সমানতালে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। নাভারন হাইওয়ে ফাঁড়ির পুলিশ স্লিপ দিয়ে মাসিক হারে ওই রোডে চলাচলকারী নসিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি থেকে চাঁদা আদায় করে। চাঁদা দিয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক এবং নাভারন-সাতক্ষীরা সড়কে বেপরোয়া গতিতে অবাধে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ইজিবাইক। মহাসড়কে এসব অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে দুঘর্টনায় প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
চাঁদাবজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাভারন হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদ কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অভয়নগর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহবুদ্দিন দাবি করেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কঠোরভাবে নসিমন, থ্রিহুইলারসহ অননুমোদিত যান চলাচল বন্ধে কাজ করছেন। তবে রাজনৈতিক চাপের কারণে অনেক সময় ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না।
তবে তিনি এসব যান থেকে চাদা আদায়ের বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি জানান, মোটর যান আইনে এদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান না থাকায় এরা সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, যশোরে চাঁদাবাজির শীর্ষে সদর ফাঁড়ির পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
যশোর কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ তুষার মন্ডলের বিরুদ্ধে। যশোরের এই প্রধান বাজারে প্রতিদিন মালামাল আনা-নেওয়া করে প্রায় ২০০ নসিমন। সদর ফাঁড়ির ইনচার্জের নির্দেশে এসব নসিমন থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। একইভাবে রাতে বাজারের ভেতরে যেসব ট্রাক প্রবেশ করে তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ২০০ টাকা করে।
বাজার ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি রাতে যশোরের প্রধান বাজারে ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি প্রবেশ করে। সদর ফাঁড়ির পুলিশ প্রতি মাসে নসিমন ও ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করে লক্ষাধিক টাকা।
এ ব্যাপারে সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ তুষার মন্ডলের বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
যশোরে সদ্য যোগ দেওয়া পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার সাংবাদিকসহ সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, ‘জেলার কোনো ইউনিটের পুলিশ চাঁদাবাজিসহ করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’